Total Pageviews

Tuesday 28 August 2012

বাংলাদেশকে নথি দিল ভারত

বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎপ্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের মনে যাতে ‘সংশয়-সন্দেহ’ না থাকে, তা নিশ্চিত করতে সোমবার একটি বড় পদক্ষেপ করল নয়াদিল্লি। সোমবার দু’দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের অধীনে টিপাইমুখ সংক্রান্ত বৈঠকে এই প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ঢাকার হাতে তুলে দেওয়া হল। দেওয়া হল ৬ খণ্ডের (ভল্যুম) বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট বা ডিপিআর। পাশাপাশি নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে ঢাকাকে জানিয়ে দেওয়া হল, চাইলে তারাও এই প্রকল্পে লগ্নি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে যৌথ অংশীদারিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হবে।

টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎপ্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। ঢাকার সন্দেহ, ভারতের এই প্রকল্পের ফলে বাংলাদেশের জলের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। গত অক্টোবর মাসে বিষয়টি আরও উচ্চগ্রামে ওঠে যখন এই প্রকল্পের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ সংস্থা তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে মণিপুর সরকার, জাতীয় জলবিদ্যুৎ শক্তি সংস্থা বা এনএইচপিসি এবং শতদ্রু জলবিদ্যুৎ নিগম একটি ‘প্রোমোটারস এগ্রিমেন্ট’ সই করে। তখন এই বার্তাই ঢাকায় যায় যে, ঢাকার আপত্তি সত্ত্বেও হইহই করে টিপাইমুখ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। এর ফলে জলের অনটন তৈরি হবে বাংলাদেশে। 
দিল্লি কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে জানিয়ে যাচ্ছে, ঢাকার স্বার্থ বিপন্ন হয় এমন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। গত বছরই এই প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ঢাকার সঙ্গে সব রকম আলোচনা করতে কেন্দ্র প্রস্তুত। সোমবারের বৈঠকেও বাংলাদেশকে বলা হয়েছে, মনমোহন সরকার এমন কিছু করতে চাইছে না যাতে হাসিনা সরকার বিপদে পড়ে। ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে অগ্রগতি হাসিনা আসার পর হয়েছে, তা কোনও কারণে বাধাপ্রাপ্ত হোক, এটা দিল্লি মোটেও চায় না। 
টিপাইমুখ সম্পর্কে যে তথ্য বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়পক্ষই। টিপাইমুখ প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণ হলে সেই বন্যার জল আটকানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি এই প্রকল্পের ফলে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে, তা যেমন ভারত নেবে তেমনই পাবে বাংলাদেশও। ঢাকার বিদ্যুৎ সমস্যার একটা সুরাহার পথ দেখাবে টিপাইমুখ। উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ প্রকল্পে লগ্নি করতে এর আগেই উৎসাহ দেখিয়েছেন হাসিনা। ভারত জানিয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্পে হাসিনা সরকারও যোগ দিতে পারে।
সরকারের এক কর্তার বক্তব্য, “২০০৯ সালে বাংলাদেশের একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দলকে আমরা টিপাইমুখের প্রস্তাবিত প্রকল্প দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রয়োজনে আবার হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।” এই প্রকল্প নির্মাণের প্রতিটি ধাপেই যে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এগোনো হচ্ছে, সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মণিপুরের বাড়তি জলের প্রয়োজন নেই। ফলে বাঁধ দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য জলবিদ্যুৎপ্রকল্প গড়া, জলের গতিপথ ঘুরিয়ে নিজেদের কাজে লাগানো নয়। তা ছাড়া এই নদীর ভৌগোলিক অবস্থান এমনই যে, চাইলেও আমরা জলের গতিমুখ পরিবর্তন করতে পারব না।” 

No comments:

Post a Comment